ধর্ম! ধর্ম! এই একটা শব্দ সারা দেশে আজ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।রাজনীতিতে সেই ধর্মের আগুনে পুড়ছে মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থান, শুভ বোধ,সম্প্রীতি,সামাজিক ভারসাম্য।।রামায়ণের রামচন্দ্র  আজ ধর্মের শিকার।রামধনু আজ রঙধনুতে রূপান্তরিত।সোসালমিডিয়ার পাতায় পাতায় ধর্মের কচকচানি।।কেউ হুমকি দিচ্ছেন।সাম্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ কৌশলে।এসব দেখে শুনে শুভ বিবেকবান মানুষেরা আজ তথাকথিত ধর্মের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন।

লোকচর্চা প্রসঙ্গে প্রায়শ দুটি অভিযোগ উঠে আসে।এক— তথাকথিত হিন্দুধর্মের রীতি নীতিকে এত প্রাধান্য দেওয়া হয় কেন? দুই—লোকচর্চায় অনেক সময় কুসংস্কারের আলোচনা চলে আসে।এতে  হিতে বিপরীত হয়।

অভিযোগ দুটিকে নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।প্রথম অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানাই- লোকচর্চা একধরনের বিজ্ঞান ও ইতিহাস চর্চার বিষয়,সন্দেহ নেই।-হিন্দুধর্মের রীতি নীতি ও লোকাচারের মধ্যে নিহিত আছে সেই প্রাচীন পরম্পরাগত ইতিহাস,জীবন সম্পর্কে ভাবনা।হিন্দুধর্মকে সনাতন ধর্ম বলা হয়।এর ব্যাখ্যা অনেক প্রকারের হয়।কিন্তু যাঁরা লোকচর্চা করেন তাঁরা জানেন অন্যান্য ধর্মের তুলনায় হিন্দুধর্মের লোকাচারে আশ্রয় লাভ করেছে বহু বিচিত্র লোকধর্ম,যে কোন গবেষকের কাছে তাই হিন্দুধর্মের লোকাচারগুলি যেমন বিলুপ্ত প্রায় ইতিহাসের আকর বলে মনে হয় তেমনি এগুলি যথেষ্ট  কৌতূহলোদ্দীপক।

এবার আসি দ্বিতীয় অভিযোগের কথায়।আগেই বলেছি লোকচর্চা আসলে এক ধরনের বিজ্ঞান।এখানে প্রবেশ করলে নিরপেক্ষতা থাকা প্রয়োজন। ঠাকুরের স্থানে ফুলপড়া ভর হত্যে দেওয়া পশুবলি দেওয়া মানতকরা ছলন দেওয়া বানফোঁড়া ইত্যদি অসংখ্য প্রথা লোকাচারকে আপাত দৃষ্টিতে নেকের কাছে কুসংস্কার বলেই মনে হতে পারে। ইতিহাসের আকর বা প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিয্য হিসাবে না হয় বাদ দিলাম কিন্তু এর মধ্যে যে পরম্পরাগত লোকবিশ্বাস ও প্রবল মানসিক শক্তির দিপ্ত প্রকাশ তাকে অস্বীকার করা মানে লোকজীবনকে অস্বীকার করা।

এর একটা বাস্তব দিকও রয়েছে।লোকসমাজের অধিকাংশ এখনও বঞ্চিত শোষিত নির্যাতিত।ভদ্রলোকের দল প্রতিনিয়ত তাদের শোষণ করে চলেছে।বাঁচার মতো তাদের জায়গা কোথায়? এই কারনে তারা বিশ্বাস করে শিবের গাজনে বান ফুঁড়লে সারা বছর তার শরীর অন্তত শিবের বরে ভালো থাকবে।পেরেছি কি আমরা তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধাগুলি দেতে? কুসংস্কার তখন এগুলি নিয়ে তথাকথিত ভদ্রলোকেরা ব্যবসা করে ,ঠকায়।পেরেছি কি এদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে। 

সকাল থেকে সারারাত টিভি চ্যানেলে চ্যানেলে চলে  তাবিজ কবজ নিয়ে ধাপ্পাবাজি।খবরের কাগজে চলে রঙ বাহারি বিজ্ঞাপন ।কারা ছাপে কাদের স্বার্থে? ধর্ম নিয়ে কারা ব্যবসা করে? কারা করে রাজনীতি? 

 এর উত্তর দিতে হবে তথাকথিত ভদ্রলোকদেরকেই।