স্বপনকুমার ঠাকুর
জমজমাট দেবতার শোভাযাত্রা। ঢাক কাঁসি আর সানাই এর বাজনা। প্রধান ভক্তের মাথায় দেবতা চড়ে বসেছেন। তিনি নাচছেন বাজনার তালে তালে। অসংখ্য মানুষ সেই শোভাযাত্রায় সামিল। দুটি বৃত্তে ভাগ হয়েছে শোভাযাত্রাটি। সামনে একদল ছেলে বুড়ো নাচছে। তার পরেই রয়েছেন কিছুটা ব্যবধানে প্রধান ভক্ত। চলছে উদ্দাম নৃত্য। হঠাৎ প্রথম বৃত্ত থেকে একজন ছিটকে এসে দুহাত প্রসারিত করে প্রধান ভক্তকে আগলিয়ে বলেন থামো!গানের বিষয় অনুসারে সাজসজ্জা করা হয়। পুরুষরাই এখানে মেয়ে সাজে। আসর বলতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গন বা মেঠো রাস্তা। গানে ব্যবহৃত হয় বাংলার নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র, যেমন ঢোল নাল খঞ্জনি সানাই বা ক্লারিওনিয়েট। এই গানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি লোকশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
বাদাই শব্দটির অর্থ হলো কলহ করা। বাদাই গানে বাদ প্রতিবাদ যুক্ত অথবা দুমুখো পাঁচালীর মাধ্যমে গান পরিবেশিত হয়। বাদাই গান একসময় দক্ষিণবঙ্গে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গাওয়া হতো। গানের সুর কথা গ্রামীণ লোককবিরা রচনা করেন। এইগানের সঙ্গে নাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিল্পীরা নেচে নেচে এই গান পরিবেশন করেন।
মূহুর্তে বাজনা যায় থেকে। উপস্থিত দর্শক ফিসফিসিয়ে ওঠে। একজন বলে ওঠে, বল ভাই। সে তখন সানাই এর সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গেয়ে ওঠে -
বলো কোন মাতুলের লজরেতে
ভাগ্নার ওড়ে মাথা।
বলতে পারলে লড়ন-চড়ন
যাবে যেতা তেতা।।
উপস্থিত দর্শকরাই দোহার্কি করেন। দু ফেরতা গানের পরই প্রধান ভক্ত সেই সুরে গলা মিলিয়ে উত্তর দেন-
শোনরে বলি ওরে কলি
শনিমামার কথা
গণার শিরে বসলো চড়ে
গজের এক মাথা।।
আসলে এর নাম বাধাই গান। বাধা দেওয়া এবং কাটান দেওয়া গানের মূল চালিকা শক্তি। এই গানের জন্ম বেড়ে ওঠা লোকায়ত স্তর থেকে। মাজগ্রামের শাকম্বরীর শোভাযাত্রায় কিম্বা পূর্ববর্ধমানের কুরমুনের শিবের গাজনে এই গায়কী রীতিকে বলা হয় খেস্যা গান।
এখন অবশ্য বাধাই গানের ঠাট, কথা, সুরের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। খসে গেছে গানের মধ্য থেকে ধর্মীয় সংস্কৃতির খোলসটি। শুধুমাত্র ধর্মীয় উপলক্ষে বাধাই গান পরিবেশিত হয় একক, দ্বৈত বা সমবেত কণ্ঠে।
গানের বিষয় অনুসারে সাজসজ্জা করা হয়। পুরুষরাই এখানে মেয়ে সাজে। আসর বলতে উন্মুক্ত প্রাঙ্গন বা মেঠো রাস্তা। গানে ব্যবহৃত হয় বাংলার নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র, যেমন ঢোল নাল খঞ্জনি সানাই বা ক্লারিওনিয়েট। এই গানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি লোকশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
বাদাই শব্দটির অর্থ হলো কলহ করা। বাদাই গানে বাদ প্রতিবাদ যুক্ত অথবা দুমুখো পাঁচালীর মাধ্যমে গান পরিবেশিত হয়। বাদাই গান একসময় দক্ষিণবঙ্গে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গাওয়া হতো। গানের সুর কথা গ্রামীণ লোককবিরা রচনা করেন। এইগানের সঙ্গে নাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শিল্পীরা নেচে নেচে এই গান পরিবেশন করেন।
গানের মাধ্যমে লোকশিক্ষার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। সমাজের নানা স্তরের অসঙ্গতি, ব্যক্তিগত প্রেম ভালোবাসা, সামাজিক শোষণ ইত্যাদি গানের বিষয়বস্তু।
পূর্ববর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার করন্দাগ্রামে বাদাই গানের ঐতিয্য আজও ধরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে অন্তত ২০টি বাদাইগানের দল রয়েছে। একসময় এই গান রচনা করতেন ও গাইতেন বিখ্যাত যাত্রাপালাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়।
Copyright ©UAA - 2024 all reserved.
BACK TO TOP